সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পাদাউকের প্রতি ভালবাসা

পাদাউক গাছ
মুগ্ধ হতাম যার বিশালতা আর পাতার বিন্যাসে, কল্পনা ছিল তার ফুল না জানি কেমন হবে? ভর দুপুরে একরাশ রৌদ্র গায়ে মেখে ছুটে গেলাম সেই মুগ্ধতায়। কিছুটা হোচট খেলাম বটে, তবে দেখাতো হলো !!
কে সে?
হ্যাঁ সে হলো পাদাউক গাছ।
ঢাকা শেরাটল হোটেলের সামনে দিয়ে কাকারাইলের মোড়ে যেতে যে রোডটা ব্যবহৃত হয় সেই রোডের দুই পাশে রমনা পার্কের অরুনোদয় গেটের সামনে সারি সারি বিশাল বিশাল প্রাচীণ গাছ দাড়িয়ে আছে। এর পাতাকে দেখতে কিছুটা সোনালু পাতার মতই, সুবিন্যস্ত। বরাবরই মুগ্ধ হই এর পাতার চমকে, কিন্তু এতো বড় গাছের ফুলটা মন দেখার খুব ইচ্ছা ছিল।

একজন মালিকে নিয়ে আমি আর গুরু গাছ চেনার অভিপ্রায়ে একদিন রমনার অরুনোদয়ের গেটে নামলাম। গুরু মহা উৎসাহে সুভাসদাকে নিয়ে গার্ডেনে ঢুকে গেছেন। আমি পদাউক গাছের ডাল ও পাতার বিন্যাসে এতোই মোহিত যে ক্লোজভাবে পাতার ছবি তোলার জন্য ব্যতিব্যস্ত।
রাস্তায় তখন সিগনালের জ্যামে কে কাকে ওভারট্যাক করে যাবে সেই প্রতিযোগিতা। আমার আসলে তখন মাথায় ছবি তোলার চিন্তা। হঠাৎ আমি আবিস্কার করলাম আমি ফুটপাতে পড়ে গেছি, ক্যামেরা হাতে ঝোলানো, ভয়ানক ব্যথায় কিছুক্ষন সেন্সলেস।চোখ যখন মেললাম তখন মানুষের জটলা, বুঝতে পারছিলাম না প্রথমে কিছুই।
তারপর কেউ হাত বাড়িয়ে ওঠালো, সিএনজি ড্রাইভারকে সবাই ধরেছে, বকাবকি করছে রং রোডে ড্রাইভ করার জন্য। আমি তাদের বললাম ছেড়ে দিন আসলে আমারও দোষ হয়েছে। তখন কেউ কেউ আমাকে বাসায় নামিয়ে দেয়ার অফার করেছে, হাসপাতালে নিতে চেয়েছে।
আমি বললাম আমার সাথে মানুষ আছে আপনারা চিন্তা করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
এই সেই পদাউক, যাকে ভালবেসে আমি কোন কষ্টকেই কষ্ট মনে করিনি।

পাদাউক
পাদাউক আমাদের দেশী গাছ নয়। ধারণা করা হয়, রমনা নিসর্গের গোড়াপত্তনের সময় ঢাকায় নিযুক্ত লন্ডনের কিউ গার্ডেনের উদ্যোক্তা রবার্ট লুই প্রাউডলক মিয়ানমার থেকে এ গাছগুলো নিয়ে আসেন।
এর বৈজ্ঞানিক নাম- Pterocarpus indicus, পরিবার- Fabaceae, অন্যান্য নাম- Amboine, Pashu Padauk, Malay Paduak, New Guinea Rosewood, Narra



ফুল দেখে এই কবিতাটাই লিখে ফেললাম বাসায় ফিরে-
দিবাসপ্ন দেখে সবাই..
বাস কিম্বা ট্রেনের ঝিমুনিতে
একঘেয়েমি বোরিং ক্লাশে
র্দীর্ঘ বক্তৃতায় যখন ঘুম আসে
স্বপ্নে বিভোর হই
এছাড়াও অদেখাকে দেখার স্বপ্ন
নানান কল্পনায় চিন্তা করা
সারি সারি সুন্দরের কাছে..
যার বিশালতা আর পাতার বিন্যাসে
কল্পনা ছিল তার ফুল
না জানি কেমন হবে?
ভর দুপুরে একরাশ
রৌদ্র গায়ে মেখে
ছুটে গেলাম সেই মুগ্ধতায়
কিছুটা হোচট খেলাম বটে
তবে দেখাতো হলো?


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শুষনি শাক চেনেন কি?

শুষনি শাক (Marsilea minuta)  হাইপারটেনশন ও ঘুমজনিত সমস্যার মহৌষধ হিসেবে শুসনি শাক ব্যবহার করেন ময়মনসিংহের গারো ও কোচ উপজাতিরা। তারা এর রস ব্যবহার করেন কাশি ও শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগের ওষুধ হিসেবে। এটিকে শাক হিসেবেও রান্না করে খান তারা। ডঃ অসীমা চাটার্জী এই শাক থেকে এপিলেপ্সির ঔষধ আবিস্কারের পেপার বের করেছেন। বাংলাদেশের সর্বত্রই এ উদ্ভিদটি পাওয়া যায়। অনেকে শুষনী আর আমরুলি শাককে একই মনে করেন। আসলে শুষনি শাকে পাতা ৪ ভাজ, কিন্তু আমরুলি হলো ৩। আরেকটা পার্থক্য হলো শুষনী শাক টক স্বাদযুক্ত নয়, কিন্তু আমরুলি টক। এর বৈজ্ঞানিক নাম Marsilea minuta  আমরুল শাক থেকে শুষনি শাক পাতা আকারে বড়। তাছাড়া আমরুল লতানে ছোট গুল্ম উদ্ভিদ হলেও শুষনি সেরকমটি মোটেও নয়। শুষনি শাক

বৃক্ষকথা, Brikkho-Kotha: পাদাউকের প্রতি ভালবাসা

বৃক্ষকথা, Brikkho-Kotha: পাদাউকের প্রতি ভালবাসা : পাদাউক গাছ মুগ্ধ হতাম যার বিশালতা আর পাতার বিন্যাসে, কল্পনা ছিল তার ফুল না জানি কেমন হবে? ভর দুপুরে একরাশ রৌদ্র গায়ে মেখে ছুটে গেলাম সেই...

আমার কানাইবাঁশি

বেণুবর্ণা অধিকারী যে রঙ ঈর্ষনীয় অনেক ফুলের কাছে। অথচ সে খুবই ক্ষুদ্র, অবহেলিত। " ফুল বলে ধন্য আমি, ধন্য আমি মাটির 'পরে" এটা কানছিঁড়া/ কানাইবাঁশি/ঘাসফুল/কানশিরা/ কানদুলি/ কানাইলতা। এর বৈজ্ঞানিক নাম Commelina benghalensis. নানাবিধ ঔষধি গুণসম্পন্ন এই ক্ষুদে গাছ। মূলতঃ জীবানু নাশক গুল্ম। কানের ইনফেকশনে বা চোখের অঞ্জলি হলে এর রস করে দিলে উপশম হয়, গাছকে একটু গরম করে তারপর রস বের করে দিতে হয়। এছাড়া কুষ্ঠ, একজিমা, দাদ রোগেও এর প্রচলন আছে। পোকার আক্রমনের প্রদাহে এর রস লাগালে দ্রুত আরোগ্য হয়। Commelinaceae পরিবারের গাছ। অনেকে একে জোনাকি শাক বা পাতা বলে থাকে। নরম কাণ্ড বিশিষ্ট এই গাছ ছায়ায় নিজেদের কলোনী করে বাস করে। পাতার গোড়ায় ছোট্ট নীল ফুল আর এর পাতার সবুজতা মনকে সজীব করে। অনেকেই একে শাক হিসেবে খেয়ে থাকেন। তবে কি কারণে খান এবং খেতে কেমন জানিনা। এর আরো কোন ব্যবহার কি আছে?