সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

এক নজরে বলধা

বেণুবর্ণা অধিকারী

বৃক্ষ বা উদ্যান শুধু পরিবেশ ভারসাম্য নয়, আমাদের সৌন্দর্য চেতনা গঠনেও এর বিরাট ভূমিকা। আমাদের মনোজগৎ সাজিয়ে তুলতে সবুজ ও সুন্দরের কোন জুড়ি নেই। শুধু টাকা পয়সা থাকলেই হয় না এর গঠনমূলক ব্যবহার করতে জানাও একটা শিল্প। যা করেছেন ১৯৩৬ সালে জমিদার নরেন্দ্র নারায়ন রায়। তবে বলধা বাগান গড়ার আগে ঢাকার পুরাতন বিমান বন্দরের উল্টা দিকে তিনি নির্মান করেন নিমফ হাউস। গ্রীক দেবীর নামানুসারে নির্মিত অনিন্দ্য সুন্দর এই ভবনে তিনি অর্জুন সহ বহু নাগলিঙ্গম গাছ লাগিয়েছিলেন। বৃটিশ সরকার জমিটি অধিগ্রহন করলে তিনি ওয়ারিতে বলধা বাগানের জমিটি ক্রয় করেন।

বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী বলধার জমদার ছিলেন রাজ কিশোর রায় চৌধুরী। তার দত্তক পুত্র ছিলেন জমিদার হরেন্দ্র নারায়ন রায় চৌধুরী । তিনি গাজীপুরের বলধা জমিদার বাড়িটি নির্মান করেন। তবে নরেন্দ্র নারায়ন রায় চৌধুরী যখন জমিদার হন ভীষন দেনার ভার মাথায়। স্বীয় বুদ্ধি আর মেধার ফলে নরেন্দ্র নারায়ন রায় চৌধুরী ধীরে ধীরে সেই অবস্থার উত্তরন ঘটান এবং প্রচুর ধন সম্পদের মালিক হন। জমিদারির বাইরেও তাঁর প্রচুর ধন-সম্পদ ছিল। বলধা গার্ডেনের নাম ছিল কালচার, যা কালক্রমে বলধায় রুপান্তরিত। দার্জিলিং ও কলকাতায় তিনি অনেক জমি কিনে সেখানে প্রাসাদসম বাড়িও গড়ে তুলেছিলেন। লখনৌ ও পুরিতে তাঁর বাড়ি ছিল। তবে সব কিছু কি অবস্থা না জানলেও বাংলাদেশে কালের সাক্ষী হয়ে এখনও টিকে আছে তাঁর এই বলধা গার্ডেন, যা উদ্ভিদপ্রেমিদের কাছে অবশ্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। শেষবার আমি গিয়েছিলাম গ্রুপের বাগেরহাটের বন্ধু ডলি আপুকে নিয়ে। সকাল ১০ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত মনের মত করে আমরা দুইপাশই দেখেছি।

দেশ-বিদেশ থেকে সব গাছ দিয়ে দীর্ঘ পঁচিশ বছর একটানা কাজ শেষে তিনি বাগানটির একাংশ গড়ে তুলেন। ১৯৩৬ সালে ৬৭২ প্রজাতির গাছ নিয়ে বর্তমান সাইকী ভাগ তার যাত্রা শুরু করেন, গ্রীক পৌরানিক শব্দ সাইকী অর্থ আত্মা । ১৯৩৮ সালে রাজা সিবিলী অংশের কাজ শুরু করেন, গ্রীক শব্দ সিবিলীর অর্থ হল-প্রকৃতীর দেবী। এই সিবিলী এবং সাইকী মিলেই বলধা বাগান। এই দুটো অংশের উদ্ভিদসম্ভার প্রধানত সাত ধরনের অর্কিড, ক্যাকটাস, গ্রীনহাউসের গাছপালা, জলজ উদ্ভিদ, গোলাপ, শিলালগ্ন প্রজাতি (rockery) ও দেয়ালের লতা, বৃক্ষশালা ও বিবিধ গাছগাছালি। সব মিলিয়ে এখানে আছে ৬৭২ প্রজাতির প্রায় ১৫,০০০টি নমুনা। অনেকগুলিই বিদেশী ও দুষ্প্রাপ্য। সম্ভবত বাংলাদেশের মধ্যে বলধায়ই আছে বিদেশী (অর্ধশতাধিক দেশের) প্রজাতির বৃহত্তম সংগ্রহ। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাগানটি পরিদর্শনে এসেছিলেন এবং জাপান থেকে সংগৃহীত Camelia japonica ফুলের অপূর্ব সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাঁর বিখ্যাত ‘ক্যামেলিয়া’ কবিতাটি রচনা করেন। বাগানের অন্যতম আর্কষণ ‘সেঞ্চুরি প্ল্যান্ট’, ফোটে শতবর্ষে একবার, ফুটেছিল কয়েক বছর আগে। বাওবাব (Adansonia digitata) গাছটিও ঐতিহাসিক মূল্যের। মধ্য-আফ্রিকার আদিবাসীরা মিশরের ফারাওদের অনেক আগে থেকেই এই গাছের খোঁড়লে মৃতদেহ রেখে মমি বানাত।
সাইকি অংশের আছেঃ (বাংলা বর্ণক্রম অনুসারে)

১) অক্রকারপাস
২) অঞ্জন
৩) অশোক (এটা দুইপাশেই আছে)
৪) আমাজন লিলি
৫) উদয়পদ্ম
৬) উভারিয়া,
৭) উলটচন্ডাল
৮) এ্যারান্টিকা
৯) ওডোরেটা,
১০)ওলিয়া
১১) কারিস
১২) ক্যাকটাস সিরাস হেক্সাগোনাস (১০০ বছরের প্রাচীন )
১৩) ক্যানাংগা ( দুইপাশেই আছে)
১৪) কনক সুধা
১৫) কন্টক লতা
১৬) কর্ডিয়া
১৭) গিংকো বিলোবা
১৮) গড়শিঙ্গা
১৯) গুস্তাভিয়া
২০) চামেলী
২১) জ্যাকুইনা
২২) জলপাই
২৩) ডেনড্রোবিয়াম
২৪) ধূপগাছ
২৫) নীলচিতা ( নীলচিতাকে কোটপিনও বলা যায়, কোটপিন হিসাবে একে ব্যবহারও করা যায়)
২৬) পিয়েরারডি
২৭) পোর্ট ল্যান্ডিয়া
২৮) প্যানটাস
২৯) প্যাপিরাস
৩০)বাঁশ
৩১) বাঁশপাতা
৩২)বিচিত্র বকুল
৩৩) বিলিম্বি
৩৪) ব্রন-ফেলসিয়া
৩৫) ভাউরোওয়ালা,
৩৬) ভাদ্রা
৩৭) ভূজ-পত্র ( বলধা বাগানের শুরু থেকেই দুটি ভূজ-পত্র সাইকী ভাগে দাঁড়িয়ে। অষ্ট্রিয়া থেকে গাছ দুটি এনেছিলেন জমিদার নরেন্দ্র নারায়ন রায়। )
৩৮) ভুত নাগিনী
৩৯) মাধবী লতা
৪০) মানি প্লান্ট
৪১) রক্তকরবী
৪২) রুপেলিয়া
৪৩) লতা চালতা
৪৪) লতাজবা
৪৫) লতাবট
৪৬) শাপলা (বিভিন্ন রঙের)
৪৮) শারদমল্লিকা
৪৯) শ্বেত শিমুল
৫০) সাইকাস
৫১) স্বর্ন অশোক
৫২) হিং
৫৩) হুসনে লতা

সিবিলী অংশের আছেঃ (বাংলা বর্ণক্রম অনুসারে)

১) অর্জুন
২) আংকুরা
৩) ইউক্যালিপটাস
৪) ইয়ক্কা
৫) ওকনা
৬) কাউফল
৭) কাটা মান্দার
৮ কাঁঠাল
৯) কাঠমালতি
১০) কেয়া
১১) কেলিকদম
১২) কোকোলোবা
১৩) ক্যামেলিয়া
১৪) কনকচাঁপা
১৫) করবী
১৬) কৃষ্ণ বট
১৭) কৃষ্ণচূড়া
১৮) গার্ডেনিয়া
১৯) গোলাপজাম
২০) চাপালিশ
২১) চালতা
২২) চিকরাশি
২৩) চন্দ্রপ্রভা
২৪) ছাতিম
২৫) জামরুল
২৬) জহুরী চাঁপা
২৭) ঝুমকা জবা
২৮) ঝুমকো লতা
২৯) টেবেবুইয়া
৩০) টর্চ
৩১) ডিউয়া
৩২) ডেউয়া
৩৩) দেবকাঞ্চন
৩৪) নাগলিঙ্গম
৩৫) নারকেল
৩৬) নীলবনলতা
৩৭) পাদাউক
৩৮) পারুল
৩৯) পোর্টল্যান্ডিয়া
৪০) পদ্ম
৪১) বকুল
৪২) বাক্সবাদাম
৪৩) বিচিত্র বট
৪৪) বিচিত্র মান্দার
৪৫) বেল
৪৬) বুদ্ধনারিকেল
৪৭) বন ছাতিম
৪৮) বনজাম
৪৯) ব্লিডিং হার্ড
৪৯-১) ভূজপত্র Melaleuca cajuputi
৫০) মাল ফেজিয়া
৫১) মুচকুন্দ চাঁপা
৫২) রক্তকাঞ্চন
৫৩) রঙ্গন
৫৪) রাজ অশোক
৫৫) রাধাচূড়া
৫৬) রানীর মুকুট
৫৭) রামধন চাপা
৫৮) লতা ভান্ডির
৫৯) লতাবেলী
৬০) শিবজটা
৬১) শ্বেতকাঞ্চন
৬২) স্কেফলেরা
৬৩) স্ক্যান্ডাল
৬৪) সুখদর্শন
৬৫) সুগারপাম
৬৬) সাদা চিতা
৬৮) স্পাডার লিলি
৬৯) স্বর্ণচাঁপা
৭০) হিজল

Image may contain: plant, outdoor and nature

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শুষনি শাক চেনেন কি?

শুষনি শাক (Marsilea minuta)  হাইপারটেনশন ও ঘুমজনিত সমস্যার মহৌষধ হিসেবে শুসনি শাক ব্যবহার করেন ময়মনসিংহের গারো ও কোচ উপজাতিরা। তারা এর রস ব্যবহার করেন কাশি ও শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগের ওষুধ হিসেবে। এটিকে শাক হিসেবেও রান্না করে খান তারা। ডঃ অসীমা চাটার্জী এই শাক থেকে এপিলেপ্সির ঔষধ আবিস্কারের পেপার বের করেছেন। বাংলাদেশের সর্বত্রই এ উদ্ভিদটি পাওয়া যায়। অনেকে শুষনী আর আমরুলি শাককে একই মনে করেন। আসলে শুষনি শাকে পাতা ৪ ভাজ, কিন্তু আমরুলি হলো ৩। আরেকটা পার্থক্য হলো শুষনী শাক টক স্বাদযুক্ত নয়, কিন্তু আমরুলি টক। এর বৈজ্ঞানিক নাম Marsilea minuta  আমরুল শাক থেকে শুষনি শাক পাতা আকারে বড়। তাছাড়া আমরুল লতানে ছোট গুল্ম উদ্ভিদ হলেও শুষনি সেরকমটি মোটেও নয়। শুষনি শাক

বৃক্ষকথা, Brikkho-Kotha: পাদাউকের প্রতি ভালবাসা

বৃক্ষকথা, Brikkho-Kotha: পাদাউকের প্রতি ভালবাসা : পাদাউক গাছ মুগ্ধ হতাম যার বিশালতা আর পাতার বিন্যাসে, কল্পনা ছিল তার ফুল না জানি কেমন হবে? ভর দুপুরে একরাশ রৌদ্র গায়ে মেখে ছুটে গেলাম সেই...

আমার কানাইবাঁশি

বেণুবর্ণা অধিকারী যে রঙ ঈর্ষনীয় অনেক ফুলের কাছে। অথচ সে খুবই ক্ষুদ্র, অবহেলিত। " ফুল বলে ধন্য আমি, ধন্য আমি মাটির 'পরে" এটা কানছিঁড়া/ কানাইবাঁশি/ঘাসফুল/কানশিরা/ কানদুলি/ কানাইলতা। এর বৈজ্ঞানিক নাম Commelina benghalensis. নানাবিধ ঔষধি গুণসম্পন্ন এই ক্ষুদে গাছ। মূলতঃ জীবানু নাশক গুল্ম। কানের ইনফেকশনে বা চোখের অঞ্জলি হলে এর রস করে দিলে উপশম হয়, গাছকে একটু গরম করে তারপর রস বের করে দিতে হয়। এছাড়া কুষ্ঠ, একজিমা, দাদ রোগেও এর প্রচলন আছে। পোকার আক্রমনের প্রদাহে এর রস লাগালে দ্রুত আরোগ্য হয়। Commelinaceae পরিবারের গাছ। অনেকে একে জোনাকি শাক বা পাতা বলে থাকে। নরম কাণ্ড বিশিষ্ট এই গাছ ছায়ায় নিজেদের কলোনী করে বাস করে। পাতার গোড়ায় ছোট্ট নীল ফুল আর এর পাতার সবুজতা মনকে সজীব করে। অনেকেই একে শাক হিসেবে খেয়ে থাকেন। তবে কি কারণে খান এবং খেতে কেমন জানিনা। এর আরো কোন ব্যবহার কি আছে?